আমার দোষ কোথায়? আমিও ন্যায়বিচার চাই’ — সিডনি থেকে শাবনূর

 ২৯ বছর পর আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সালমান শাহর মৃত্যু। আদালত এবার ঘটনাটিকে ‘হত্যা’ হিসেবে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থানরত নায়িকা শাবনূর প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন। দীর্ঘ আলাপচারিতায় তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “আমাকে কেন দোষারোপ করা হচ্ছে? আমিও বিচার চাই।”

‘আমার দোষ কোথায়? আমিও ন্যায়বিচার চাই’ — সিডনি থেকে শাবনূর


ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সালমান শাহ যেন এক ধূমকেতুর মতোই আগমন ঘটিয়েছিলেন। মাত্র চার বছরে তিনি বদলে দেন বাণিজ্যিক সিনেমার ধারা ও দর্শকের রুচি। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনে নিজ বাসায় তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়। সেই রহস্যময় মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পরও অজানার পর্দা পুরোপুরি ওঠেনি।

২০২৫ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত এই মৃত্যুকে হত্যা হিসেবে গণ্য করে রমনা থানাকে মামলা রুজু ও তদন্তের নির্দেশ দেন। সালমানের মা নীলা চৌধুরীর নারাজি আবেদনের পরই আসে এই আদেশ। পরদিন তাঁর মামা মোহাম্মদ আলমগীর বাদী হয়ে রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন—যেখানে সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুছি, খলনায়ক ডনসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়।

এই ঘটনার পর থেকেই চলচ্চিত্র অঙ্গন ও সামাজিক মাধ্যমে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। পুরোনো গুজব ও কল্পকাহিনি ঘিরে আবার আলোচনায় এসেছে সালমান শাহর সবচেয়ে জনপ্রিয় সহ-অভিনেত্রী শাবনূরের নাম—যার সঙ্গে তিনি অভিনয় করেছেন ১৪টি সিনেমায়, যেমন ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেমযুদ্ধ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘সুজন সখী’ ইত্যাদি।

সিডনিতে এক দীর্ঘ আলাপচারিতায় শাবনূর বলেন,

“আমি সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশের খবর জেনেছি। যেহেতু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তাই বিস্তারিত কিছু বলব না। তবে আমার নাম জড়িয়ে যে গুজব ও অপপ্রচার চলছে, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

তিনি আরও যোগ করেন,

“সালমান শাহ ছিলেন আমার অত্যন্ত প্রিয় সহ-অভিনেতা। ওর সঙ্গে কাজ করেই আমার ক্যারিয়ার গড়ে ওঠে। আমাদের জুটির সাফল্য অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেউ কেউ আমার নাম জড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।”

টেলিফোনে আরও খোলামেলা হয়ে শাবনূর বলেন,

“আমার সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, সবই মিথ্যা। আমি তখন ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তবু কেন আমাকে এখনো দোষারোপ করা হচ্ছে? এটা খুবই কষ্টের। ঘটনার আগের দিনও সালমান আর সামিরা একসঙ্গে হাসিখুশি ছিলেন—এটা আমাদের পরিচালক ও ইউনিটের অনেকে দেখেছে।”

“আমিও এখন বিচার চাই”

দীর্ঘদিন ধরে অপপ্রচার ও গুজবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শাবনূর বলেন,

“আমিও বিচার চাই—আমার সম্পর্কে যে নোংরা অপপ্রচার চলছে, তারও বিচার চাই। কীভাবে এক রাতেই সব বদলে গেল, তা জানতে চাই। যারা তখন ওর (সালমানের) কাছাকাছি ছিল, তাদের জবাবদিহি করতে হবে। পর্দার রসায়ন মানে বাস্তব সম্পর্ক নয়—এটা সবাইকে বুঝতে হবে।”

তিনি আরও বলেন,

“আমার বয়স তখন খুব কম ছিল। আমি পরিবারের অনুমতি ছাড়া কোথাও যেতেও পারতাম না। আমার কাজকর্ম সবই পরিবারের তত্ত্বাবধানে ছিল। অথচ আমার নাম টেনে গল্প বানানো হয়েছে।”

“বিতর্কের ভারে ক্লান্ত”

প্রায় তিন দশক ধরে এই বিতর্কের ভার টেনে চলাকে শাবনূর জীবনের সবচেয়ে কষ্টদায়ক অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করেন।

“প্রতিবার যখন এই বিষয়টা নতুন করে আসে, মনে হয় আমি আবার সেই অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছি। এখন আমি সংসার করছি, সন্তান নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই।”

বর্তমানে সিডনিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন শাবনূর। তাঁর একমাত্র সন্তান ও পরিবারই এখন তাঁর জীবনের কেন্দ্রবিন্দু।
শেষে তিনি বলেন,

“জনগণ যেমন বিচার চায়, সালমান ভাইয়ের মা নীলা আন্টিও যেমন সন্তানের ন্যায়বিচার চান—আমিও তাই চাই। যে-ই দোষী হোক, তাকে যেন আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হয়।”

 আরও পড়ুন: সোনার দামে ধস: তিন দিনে কমেছে ১৫ হাজার টাকা, ভরি নেমেছে ২ লাখের নিচে

Post a Comment

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال