ভাসাবে নাকি ডোবাবে আজ বাংলাদেশ?

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টির পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে দাঁড়িয়ে বোলারদের কাছে সরাসরি দুঃখ প্রকাশ করেন লিটন দাস। কিছুক্ষণ পর সংবাদ সম্মেলনে ওপেনার তানজিদ হাসানও প্রায় একই সুরে কথা বলেন। তাঁর মতে, দলের বেশির ভাগ ম্যাচেই বোলাররা নিয়মিত ভালো পারফর্ম করছেন, কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই হার ডেকে আনছে।

ভাসাবে নাকি ডোবাবে আজ বাংলাদেশ?

তানজিদের এই কথাতেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের বর্তমান দুশ্চিন্তা। আগামী ফেব্রুয়ারি–মার্চে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দলটির হাতে আছে মাত্র চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এই সময়ের মধ্যে যদি ব্যাটসম্যানরা ছন্দ ফিরে না পান, তবে বিশ্বকাপে “বোলাররা ভাসান, ব্যাটসম্যানরা ডোবান” অবস্থা নিয়েই নামতে হবে তাঁদের। চলতি বছরও সেই গল্পই বলছে পরিসংখ্যান।

২০২৫ সালে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে ওভারপ্রতি সবচেয়ে কম রান দেওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে। ২৬ ম্যাচে তাঁদের গড় রানরেট ৭.৮৩। এর ওপরে থাকা আফগানিস্তান, ভারত ও জিম্বাবুয়ের বোলাররাও ওভারপ্রতি সাড়ে সাতের বেশি রান দিয়েছেন।

এ বছর অন্তত ১০ ওভার বল করা বোলারদের মধ্যে একমাত্র মোস্তাফিজুর রহমানই ওভারপ্রতি ছয়ের নিচে রান দিয়েছেন। অন্য বোলাররাও নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেন, কিন্তু তাঁদের সেই প্রচেষ্টা বারবার ম্লান হয়ে যাচ্ছে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারের আগে বাংলাদেশ চারটি টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে ঠিকই, কিন্তু সেসব জয়ে ব্যাটিং পারফরম্যান্স ছিল গড়পড়তা।

২০২৫ সালে অন্তত ১০ ইনিংস খেলেছেন, এমন টেস্ট খেলুড়ে দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে হৃদয়ের স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে কম। দলীয় পরিসংখ্যানও বলছে একই কথা—টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে এ বছর সবচেয়ে ধীরগতির ব্যাটিং করছে বাংলাদেশ (স্ট্রাইক রেট ১২৫.৯৪), তাদের পরেই আছে আফগানিস্তান (১২৫.০১)।

সবচেয়ে বড় সমস্যা মিডল অর্ডারে। এখানে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে সুযোগ পাচ্ছেন জাকের আলী, তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন ও নুরুল হাসান—কিন্তু কেউই নিয়মিতভাবে দলের ভরসা হতে পারছেন না।

জাকের আলীর অফ সাইডের বাইরের বলে দুর্বলতা এখন প্রতিপক্ষদের সবার জানা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রথম ম্যাচে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরে ১৮ বলে ১৭ রানের ইনিংস খেলেন, যেখানে প্রতিটি ডট বল যেন তাঁর অনিশ্চয়তাই বাড়িয়েছে। এমনকি চট্টগ্রামের দর্শকরাও তাঁকে দুয়ো দিয়েছেন।

হৃদয় যদিও ২০ ইনিংসে ৪০৪ রান করেছেন, কিন্তু তাঁর স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১০.৩৯—যা এ বছর টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। শামীম হোসেনের অবস্থাও ভালো নয়; ২১ ম্যাচে করেছেন মাত্র ২৬১ রান, আর শেষ ৭ ইনিংসে তিনবার শূন্য ও দুবার ১ রানে আউট হয়েছেন। প্রথম ম্যাচের পর অধিনায়ক লিটন দাস নাম ধরেই তাঁর প্রতি হতাশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের বড় টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার ইতিহাস নতুন নয়। কিন্তু সামনে আরেকটি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আর এবারও সেই একই দুশ্চিন্তা—ব্যাটিং বিভাগ। আজ চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সিরিজে ধবলধোলাই এড়ানোর শেষ ম্যাচেও যদি ব্যাটসম্যানরা জেগে উঠতে না পারেন, তাহলে নির্বাচকদের হয়তো বাধ্য হয়েই বিকল্প খুঁজতে নামতে হবে।

আরও পড়ুন: আজ টিভিতে কোন কোন খেলা? দেখুন সরাসরি

Post a Comment

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال