চলন্ত বাস থেকে নামতে গিয়ে লাফ দিতে হলো যাত্রীকে

বাসে ওঠার পর প্রথমে আমি শান্তই ছিলাম। কিন্তু কন্ডাক্টরের একের পর এক কটূ মন্তব্য শুনে আর নিজেকে সামলাতে পারিনি,’ বলছিলেন রাজধানীর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, যিনি সম্প্রতি রমজান পরিবহনের এক বাসে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার পুরো বিবরণ দেন। জানান, ঘটনার সময় বাসে কেউ প্রতিবাদ না করায় তিনি মানসিকভাবে খুব কষ্ট পেয়েছেন। এমনকি যিনি ভিডিও ধারণ করেছিলেন, তিনিও তাঁকে কটূ কথা বলেছিলেন। বাস থেকে নামার চেষ্টা করলেও চালক বারবার বাস এগিয়ে দিচ্ছিলেন, ফলে নামতেও পারছিলেন না।

চলন্ত বাস থেকে নামতে গিয়ে লাফ দিতে হলো যাত্রীকে
রাজধানীর বছিলায় পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে শারীরিকভাবে আক্রমণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণী

তবু তরুণী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘এই হেনস্তা আমাকে থামাতে পারবে না। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করব, কথা বলব।’

গত ২৭ অক্টোবর ঘটে এই ঘটনাটি। বাসের এক যাত্রী ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা ভাইরাল হয় এবং ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। পরে গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিন (৪৫) গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তরুণীর দেওয়া এজাহারের ভিত্তিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা দায়ের করেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণী বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়ান। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি তাঁকে চড় মারেন। তরুণীও প্রতিবাদে জুতা হাতে তেড়ে যান। এরপর দুজনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয় এবং ওই ব্যক্তি তাঁকে ফেলে দেন। তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘তুই আমার পোশাক নিয়ে কথা বলবি কেন?’ কিন্তু বাসে উপস্থিত অধিকাংশ যাত্রী নীরব থাকেন। মাত্র দুই নারী ও এক পুরুষ যাত্রী তাঁকে সহায়তার চেষ্টা করেন।

 তাঁর পরিবার চাঁদপুরে থাকে। বাবা একটি দোকান চালান। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষে এখন ঢাকায় এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিতাঁর নি নিজের খরচ ও বাবাকে সহায়তা করতে বিভিন্ন কাজ করেন—হাতের কাজ, ছবি আঁকা এবং মাঝে মাঝে টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনাও করেন। বর্তমানে রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজনের সঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে থাকেন।

তিনি বলেন, সেদিন হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় মোবাইল মেরামত করতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে ধানমন্ডি–১৫ থেকে রমজান পরিবহনের বাসে ওঠেন, তখন দুপুর দুইটা বা আড়াইটা। ভাড়া দেওয়ার সময় ‘স্টুডেন্ট’ বলে অর্ধেক ভাড়া দিলে কন্ডাক্টর তাচ্ছিল্যের সুরে বলেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট।’ তরুণী তখনও শান্তভাবে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক?’—তবু কন্ডাক্টর কথা বাড়াতে থাকেন।

তরুণীর ভাষায়, ‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি। কিন্তু যখন নামার সময় কন্ডাক্টর বলল, “এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়, যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—তখন আমি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। বাস থেকে নেমে আবার উঠে প্রতিবাদ করি।’

তিনি আরও বলেন, ভিডিওতে বিষয়টি এমনভাবে দেখা গেছে যেন তিনি হঠাৎ করেই রেগে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা নয়—‘আমি তার শেষের ওই মন্তব্যটা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলাম। ওই মুহূর্তে আর চুপ থাকা সম্ভব হয়নি।’

আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের বৈঠক: নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা

Post a Comment

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال