একটির পর একটি জটিলতায় জড়িয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প। অর্থ সংকট, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বকেয়া নিয়ে বিরোধ, কাজের ধীরগতি—সব মিলিয়ে প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া এখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
| চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষের দিকে। |
‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, পরে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ২০৪ কোটিতে। প্রকল্পের মেয়াদও তিন দফা বাড়ানো হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ওয়াসা চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, কিন্তু পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছর (২০২৫–২৬)-এ প্রয়োজন ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি। এখন পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, ফেব্রুয়ারির পর থেকে করা কাজের বিল পরিশোধ করা হয়নি। এর আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ ছিল; পরে আশ্বাস পেয়ে পুনরায় শুরু করা হয়। কিন্তু ফের একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচনী মৌসুমে প্রকল্পের বরাদ্দ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। অর্থ না এলে কাজ স্থবির হয়ে যাবে, ফলে ২০২৭ সালের শুরুতে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনাও বিলম্বিত হতে পারে।
ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, “গত বছরও অর্থের অভাবে অনেক কাজ আটকে ছিল। এবারও চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পেলে সময়সীমা রক্ষা করা কঠিন হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে বরাদ্দের বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।”
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।”
প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, এতে দৈনিক ১০ কোটি লিটার সক্ষমতার একটি পয়োশোধনাগার, দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার ক্ষমতার সেপটিক ট্যাংক বর্জ্য শোধনাগার এবং ২০০ কিলোমিটার পয়োনালা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে ২২টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা উন্নত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার আওতায় আসবে, যার সুফল পাবেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ।
প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ গত ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড উপঠিকাদারদের বকেয়া পরিশোধ না করায় সাতটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে।
হালিশহর এলাকায় কাজ করছে মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহান এন্টারপ্রাইজ, দেশ কন্ট্রাক্টরস অ্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেড, ইনাস এন্টারপ্রাইজ, পোর্ট হারবার ইন্টারন্যাশনাল ও পাওয়ার বাংলা করপোরেশন। তাদের দাবি, প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার তাইয়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় উপঠিকাদাররা দুটি শর্তে কাজ পুনরায় শুরুতে রাজি হয়েছেন—আগামী সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি।
এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প পরিচালক আহাদুজ্জামান বাতেন বলেন, “ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল, এরপর থেকে করা কাজের টাকা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ ছিল, পরে আশ্বাসে শুরু করেছিলাম। এবারও একই অবস্থা। তবে আলোচনার পর শর্তসাপেক্ষে আবার কাজ শুরু করছি।”