বিএনপি ও সদ্য গঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির মধ্যে সম্ভাব্য নির্বাচনী জোটের গুঞ্জন বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। তারা একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকেছে। প্রায় দুই দশক ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দলটি ভেঙে পড়েনি; নানা দমন–পীড়ন, গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিক চাপে থেকেও সংগঠনটি টিকে আছে।
অনেক নাগরিকের ধারণা, আসন্ন নির্বাচনে সরকার গঠনের সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সম্ভাবনা বিএনপিরই আছে। সাংগঠনিক কাঠামো, জনভিত্তি ও মাঠ পর্যায়ের উপস্থিতির দিক থেকে দলটি এখনো দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হয়।
সুতরাং বিএনপির সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী সমঝোতায় আগ্রহী হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। অতীতেও তারা বেশ কিছু ছোট দলের সঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচনী সহযোগিতায় অংশ নিয়েছে।
তবে নতুন প্রশ্নটি হলো—জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপির সঙ্গে জোট গড়া বিএনপির জন্য আসলেই কতটা লাভজনক হবে?
প্রথম নজরে মনে হতে পারে, তরুণ নেতৃত্বের এই দলের সঙ্গে যুক্ত হলে বিএনপি তরুণ প্রজন্মের কিছুটা সমর্থন পেতে পারে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি এতটা আশাব্যঞ্জক নয়।
গত আট–নয় মাসে বিএনপির শীর্ষ নেতারা এনসিপিকে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দলটির কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন। এখন যদি সেই দলের সঙ্গেই বিএনপি জোট বাঁধে, তাহলে প্রতিপক্ষরা সহজেই নির্বাচনী প্রচারণায় এই বিষয়টি কাজে লাগাবে—বলে দিতে পারবে, বিএনপি নিজেই ‘কিংস পার্টি’র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
আরেকটি দিকও বিবেচ্য। এনসিপিকে অধ্যাপক ইউনূসের ঘনিষ্ঠ মহলের দল হিসেবে দেখা হয় এবং ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচন তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। ফলে এনসিপির সঙ্গে জোট গড়া বিএনপির জন্য একটি বিভ্রান্তিকর বার্তা তৈরি করতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তরুণদের মধ্যে এনসিপির বর্তমান অবস্থান। ডাকসু, চাকসু, জাকসু ও রাকসুর সাম্প্রতিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এনসিপি–সম্পৃক্ত ছাত্র সংগঠন খুবই হতাশাজনক ফলাফল করেছে—কিছু ক্ষেত্রে চতুর্থ বা পঞ্চম অবস্থানে থেকেছে, এমনকি ভোটসংখ্যাও ছিল খুব কম।
যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এনসিপির উৎপত্তি, সেখানেও তাদের ফলাফল ছিল হতাশাজনক। অর্থাৎ গত দেড় বছরে দলটি তরুণদের একটি বড় অংশের আস্থা হারিয়েছে।
তরুণদের অন্যান্য সংগঠনও এনসিপির কিছু কার্যক্রমে বিরক্তি প্রকাশ করেছে। ফলে বিএনপি যদি এই দলের সঙ্গে জোট করে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়–কেন্দ্রিক তরুণ ভোটারদের একটি অংশ তাদের প্রতি অনীহা প্রকাশ করতে পারে।
অবশ্য কেউ কেউ যুক্তি দিতে পারেন, ছাত্রদলও সাম্প্রতিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু পার্থক্য হলো—দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস রাজনীতি থেকে বঞ্চিত থাকলেও ছাত্রদল তাদের সংগঠন টিকিয়ে রেখেছে, যেখানে এনসিপি নিজেদের ঘরেই ন্যূনতম ভোট পেতে হিমশিম খাচ্ছে।
তাই বিএনপির উচিত এনসিপির সঙ্গে জোটের আগে রাজনৈতিক বাস্তবতা ও তরুণসমাজের মনোভাব গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা। তরুণদের সমর্থন পাওয়ার আশায় গঠিত একটি জোট যেন উল্টো নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, সেটিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা।